রাকিবুল হাছান, মনপুরা প্রতিনিধি: ভোলার মনপুরা উপজেলায় চর পাতিলা বিভিন্ন খালে চলছে পরিবেশ বিধ্বংসী বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার। এতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও মাছের পোনা প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে।

অন্যদিকে বিষ প্রয়োগে শিকার করা পানি পান করে মারা যাচ্ছেন বন্য প্রাণী হরিণ সহ গৃহপালিত পশু। অভিযোগ উঠেছে,এ কারবারের সাথে মাছের আড়ৎদার, দাদনদাতা ও এক শ্রেনীর কিটনাশক বিক্রেতার পাশাপাশি বন বিভাগের সদস্যদের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন বিভিন্ন মহল।

বিষ প্রয়োগের শিকার মাছ খেয়ে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী স্বাস্থ্যগতভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে। জেলে নামধারী সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা নানা ছত্রছায়ায় মৎস্য সম্পদ নিধনে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

কম পরিশ্রমে অধিক মুনাফা লাভের আশায় মনপুরার কিছু অসাধু জেলেরা বিভিন্ন সময় কীটনাশক সঙ্গে নিয়ে যান। বনের বিতরে ছোট ছোট খাল গুলোকে আবদ্ধ করে বিষ প্রয়োগ করেন।এতে কিছু সময় অপেক্ষার পর মাছ গুলো মরে বেসে উঠে।তখন প্রয়োজনীয় মাছ গুলো সংগ্রহ করা হয়।পরে ওই মাছ বাজারে সরবরাহ করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সংলগ্ন সংরক্ষিত চর চরপিয়াল, চরপাতিলা, চর নজরুল, বদনার চর সহ বিভিন্ন চর গুলোর খালে বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছ নিধন করা হয়।

জানা গেছে, মধ্য ভাটার সময় খালের গোড়ায় জাল পেতে খালের আগায় বিষ দেওয়া হয়। কিছুক্ষনের মধ্যে মাছগুলো ছটফট করতে করতে দূর্বল হয়ে ভাসতে ভাসতে জালে এসে আটকা পড়ে। এ কাজে বিষ পাউডারসহ বিভিন্ন বিষ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

এতে একদিকে যেমন বনের গহীনে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও মাছের পোনা ধ্বংস হচ্ছে অন্যদিকে বিষ মিশ্রিত পানি পান করে হরিণসহ বনের নানা বন্য প্রানীও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে।

আবার ওই বিষ মিশ্রিত মাছ খেয়ে জনসাধারণ পেটের সমস্যা সহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিছু দিন আগে পঁচা কোড়ালিয়া বিট কর্মকর্তা অভিযান পরিচালনা করে বন থেকে দুই জন কে আটক করেন।তবে তাদের কাছে কোন বিষ বা প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

আরো জানা গেছে,আমবস্যা জোয়ারের সময় খালে যখন পানিতে থৈ থৈ করে তখন খালের উপর বাঁধ নির্মাণ করে পানি আটকিয়ে রাখেন চক্রটি।পরে আবহাওয়া ভালো ও প্রখর রোদ হলে খালের উপর বাঁধ দেওয়া সেই পানি তে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করেন। বিষাক্ত কেমিকেল প্রয়োগের ফলে সব ধরনের জলজ প্রাণিই মারা যাচ্ছে।

এতে একদিকে বিলুপ্তির মূখে পড়ছে দেশের মৎস্য সম্পদ অন্যদিকে হুমকির মুখে বিরূপ প্রভাবে রয়েছে জীব বৈচিত্র। কীটনাশক প্রয়োগের ফলে পানির মধ্যে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, পোনা ও অন্যান্য জলজ প্রাণী নির্বিচারে মারা পড়ছে। এতে মাছের প্রজনন-প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া বিষ মেশানো পানি পান করে গরু, মহিষসহ বিভিন্ন প্রাণী মারা যাচ্ছেন।

উপজেলা রহমানপুর গ্রামের বাসিন্দা খালেক ব্যাপারী ৫ টি গরু চার পাতিয়া বনে ঘাস খাওয়ার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তার গরু গুলো বিষাক্ত সেই পানি পান করে ১টি গরু মারা যান।অপর ৪টি গরু জটিল রোগ আক্রান্ত হয়েছে।

এতে সচেতন মহল মনে করেন বনের বিতরে প্রয়োগ বিষের পানি পান করে নির্বিকার মারা যাচ্ছেন হরিণ সহ অনন্য বন্যপ্রাণী। এই ভাবে বনের বিতর বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করতে থাকে আর সেই পানি পান করে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বনে থাকা সৌন্দর্য চিত্রা হরিণ সহ বন্যপ্রাণী গুলো।

দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহরলাল চক্রবর্তী বলেন, অধিক মুনাফার আশায় জেলে নামধারী একটি চক্র দিনের পর দিন এই অমার্জনীয় অপরাধ করে যাচ্ছে। বন্য প্রাণী ও পরিবেশের জন্য এটা চরম হুমকি। বন বিভাগের উচিত আইনের সঠিক প্রয়োগ, সার্বক্ষণিক মনিটরিং এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি করে এ ধরনের অপতৎপরতা রোধ করা।

পঁচা কোড়ালিয়া বিট কর্মকর্তা আব্বাস জানান,অসাধু চক্রটিকে ধরার জন্য বনে অভিযান চলছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন বলেন, বিষ দিয়ে মাছ শিকার করলে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের ঘটনা ঘটে।আর যে খালে বিষ প্রয়োগ করা হয় কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সেখানে কোনো মাছ প্রবেশ করতে পারে না। ফলে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়।

মনপুরা রেঞ্জ কর্মকর্তা মাঈনুল ইসলাম বলেন, জনবল সংকটে কারণে সঠিক সময় অভিযান পরিচালনা করা যায় না।সেই সুযোগ ব্যবহার করে বনের বিতর কিছু অসাধু জেলে এমন করতে পারে।তবে সেই অসাধু চক্রটিকে ধরার চেষ্টা চলছে।

ক্যাপশন-একশ্রেণির আড়ৎদার ও জেলে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের ছত্রচ্ছায়ায় নৌকা ও ট্রলার নিয়ে বনের ভেতরে ঢুকে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার করছে। এতে শুধু মাছ নয়, প্রায় সব জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে। বিষ দিয়ে মাছ শিকার করায় মনপুরার জীববৈচিত্র্যও বন্যপ্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।